শীঘ্রই উচ্ছেদ হচ্ছে সৈকতের অবৈধ স্থাপনা

মনতোষ বেদজ্ঞ :

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে নির্মিত সকল স্থাপনা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে উচ্ছেদ করা হবে। সৈকতের প্রকৃত হকারদের পুনর্বাসন করা হবে অন্যত্র। কোথায় তাদের পুনর্বাসন করা করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে জেলা প্রশাসন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আবছার এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সৈকতের বালিয়াড়িতে গড়ে তোলা সকল অসুন্দর স্থাপনা উচ্ছেদ এবং প্রকৃত হকারদের অন্যত্র পুনর্বাসনের বিষয়ে আগে থেকেই চিন্তাভাবনা করছে জেলা প্রশাসন। আশা করছি, খুব শিগগিরই সৈকতে আর কোন অসুন্দর স্থাপনা থাকবে না।’

ভ্রাম্যমান হকারদের দোকন বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হলেও খোদ সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির কতিপয় সদস্য কিভাবে দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা Ñএমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আবছার বলেন, ‘সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির বিষয়ে কোন কথা বলার এখতিয়ার আমার নেই।’

প্রসঙ্গতঃ কক্সবাজার সৈকতে হকার পুনর্বাসনের নামে ৫ শতাধিক দোকান ঘর নির্মাণ করে তা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে খোদ ‘বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র কতিপয় সদস্য সহ প্রভাবশালী বিত্তশালীরা। সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির কতিপয় সদস্য নিজের নামে, স্বজন বা অনুগত লোকজনের নামে অস্থায়ী দোকান, কিটকট, জেট স্কী, বিচ বাইক, ফটোগ্রাফি কার্ড বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় রাজনীতিক, সরকারের প্রভাবশালী আমলার স্বজন, স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা সহ প্রভাবশালী বিত্তশালীরা।

এ বিষয়ে গতকাল দৈনিক কক্সবাজার প্রত্রিকায় ‘সৈকত দখলে বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটি/হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য, ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এরপরই সৈকতের বালিয়াড়িতে গড়ে তোলা সকল স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কথা জানালো জেলা প্রশাসন।
এদিকে সৈকতের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত এবং কমিটি বিলুপ্ত করার দাবতে আন্দোলনরত একটি সংগঠন ‘আমরা কক্সবাজাবাসী’র নেতৃবৃন্দের সাথে গতকাল বৈঠক করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আবছার।

বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ সংগঠনের নেতা কলিম উল্লাহ বলেন, ‘বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমাদের জানিয়েছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই সৈকতের বালিয়াড়িতে নির্মিত সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এছাড়াও সৈকতে কিটকটের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে।

সোমবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আমাদের মানববন্ধন ও গনসমাবেশ করার কথা ছিল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আবছারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সোমবারের এ কর্মসূচি স্থগিত করেছি।  কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবো।

এ বিষয়ে আজ (গতকাল) আমরা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধামন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছি।’  

এসময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, সংগঠনের সমন্বয়ক করিম উল্লাহ, নাজিম উদ্দিন, সাংবাদিক মহসীন শেখ, এইচএম নজরুল ইসলাম, কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জাপা নেতা রুহুল আমিন সিকদার,অনিল দত্ত, ইমাম খাইর, ইব্রাহিম খলিল মামুন, মোহাম্মদ উর রহমান মাসুদ, মমতাজ শফিনা আজিম, নাছির উদ্দিন বিপু, আরফাতুল মজিদ,আজিম নিহাদ, কামাল উদ্দিন (কামাল), নাজমুল হোসাইন মিটু, আজিজ উদ্দিন, মোঃ সেলিম উদ্দিন, মোঃ মোর্শেদুল আলম খোকন, মংথেনহ্লা রাখাইন। এদিকে আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের পূর্ব ঘোষিত আজ ২৪ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে গণ সমাবেশ জেলা প্রশাসনের অনুরোধে কারণে স্থগিত করা হয়।

স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা বলেছেন, কক্সবাজার সৈকতে সকল স্থাপনা অপসারণের নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। উপরন্তু বিভিন্ন প্রভাবশালীরা সৈকত দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। এই সব স্থাপনা বেচা-বিক্রির মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে